Welcome you to my blog. Please feel free to leave your comment. Thank you for visiting.

Friday 2 January 2015

হ্যাপি ও প্রতিশ্রুতি প্রলোভনে প্রতারণা




(It's amazing to see one piece of article is published on two newspapers! Bangla Tribune published this on 25 December 2014 and Redtimesbd24.com has republished it today! Thanks to both. Special thanks to Poet Soumitra Dev for liking this for his news-portal.

My sincere apology to all of my non-Bengali friends for posting it on Bangla. Hope google translate will help you to read it.)

ভাষার ব্যবহার ঠিক কবে শুরু হয়েছিলো সঠিকভাবে বলা না গেলও ভাষা প্রতিনিয়তই হচ্ছে পরিবর্তন, আসছে বৈচিত্র্যমুখের ভাষা এসে স্থান পাচ্ছে সাহিত্যে, কবিতা ও নাটকের সংলাপে।  এ ভাষা আবার আলোচনা, বিতর্ক, মনের ভাব প্রকাশের এক প্রধানতম মাধ্যম  ভাষার অসম্ভব সুন্দর ব্যবহারে মানুষের মাঝে খেলা করে মুগ্ধতা, মানুষ হয় আকর্ষিত। আবার ভাষার  ব্যবহারিক দৈন্যে  অনেকেই তাদের মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ হন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে হয়ে উঠতে পারে বিধ্বংসী। বাংলা ট্রিবিউন-এ  জব্বার হোসেন এর লেখারুবেল-হ্যাপি: আগে কেন ভাবেননি?” শিরোনামে একটি আর্টিকেল পড়ে এমনি এক আবহে এসে হোঁচট খেতে হলো।  বুঝলাম, ভাষার দীনতাটি কীভাবে ভাবনা ও প্রকাশের ব্যবধানকে বৃহৎ করে তুলে ধরতে পারে।    

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত একটি ঘটনা──হ্যাপি ও রুবেলর তথাকথিত প্রেম-যুদ্ধ  অনেক  বাংলাদেশীদেরকে বিষয়টি আকৃষ্ট করেছে। অনেকেই এ নিয়ে লিখছেন, আলোচনা ও সমালোচনা করছেন। টিভি, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন নিউ পোর্টাল বিষয়টিকে একাধিকবার খবরের শিরোনাম হবার মর্যাদা দিয়েছেন প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশের জন্য এটি একটি পজিটিভ দিক।  তার মানে মানুষ আগ্রহী, মানুষ জানতে চায়, যেতে চায় বিষয়ের গভীরে কথাটি শুনে হয়তো কেউ কেউ ভুরু কুঁচকাতে পারেন, এখানে এ কী বলছি!  

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, স্বল্পবয়সী বাংলাদেশে এখন আছে প্রায় ২৫টি টিভি চ্যানেল, প্রায় ২০টি রেডিও স্টেইশন, প্রায় ৩০টি জাতীয় সংবাদপত্র, অগণিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং প্রায় ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহক।। ছাপ্পান্নহাজার বর্গমাইল আর ১৬ কোটি মানুষের দেশে এ এক আশীর্বাদএই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে উপেক্ষা করে, হতাশার ঊর্ধ্বে উঠে, বাংলাদেশের মানুষের এখনো সেই সময় আছে সেলেব্রিটিদের নিয়ে কথা বলার। এখনো সময় আছে, কোনটা ন্যায় আর অন্যায় নিয়ে ভাবার। আমরা এখনো স্বার্থপর হয়ে উঠিনি,  আমরা হতাশ নই, আমরা এখনও ভাবতে পারি।

জাতীয় জীবনে আমাদের ভাবনার অনেক বিষয়ই আছে। তবে রুবেল ও হ্যাপির ঘটনা আমাদের একটু গভীরভাবে ভাবতে হবে।  আমাদের দেখতে হবে, জাতি হিসেবে আমাদের সমাজে নারীদের অবস্থান কোথায় আছে।  পুরুষদের নিয়েও  কি আলাদাভাবে ভাবনার কোনো ক্ষেত্র তৈরি করার প্রয়োজন আছে।  নাকি  উভয় ক্ষেত্রেই নারী ও পুরুষের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।     

উপর্যুক্ত শিরোনামে এরকমই একটি ভাবনার অবতারণা করতে চেয়েছেন জব্বার হোসেনতাঁর  লেখায় নারীবাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “নারীবাদ  বরং অনেকবেশি মানবিকতাবাদ। অনেক বেশি মানবিক”। এ কথার সাথে কোনো দ্বিমত নেই। নারীবাদী হতে হলেই কোনো নারীর ভুলকে কিংবা অপরাধকে সমর্থন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।  কিন্তু  পুরো লেখাটি পড়ে মনে হয়, লেখক হয়তো ভুলে গেছেন, নারীবাদটি এসেছেই নারীদের সমমর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে।  আর তাই যদি নারীবাদের মূল কথা হয় তাহলে হ্যাপি কোথায় ভুল  কিংবা অপরাধ করেছেন ধর্ষণের মত স্পর্শকাতর একটি মামলা করে।  

রুবেলের বিরুদ্ধে হ্যাপির একটি অভিযোগ প্রসঙ্গে জব্বার হোসেন লিখেছেন, “হ্যাপি বলেছেন যে, রুবেল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হ্যাপির সাথে প্রেম করেছেন, প্রেম কোনো লোভ করে হয় না”  
 
প্রেম আসলেই কোনো লোভ করে কিংবা লোভে পড়ে হয় না, কিন্তু লোভ দেখিয়ে প্রেমে ফেলা যায়। আর যে লোভ দেখিয়ে প্রেমে ফেলে তাকে প্রতারক না বলার তো কোনো জো দেখি না।  প্রশ্ন আসতে পারে, লোভটি কিসের লোভ অথবা প্রেম তো এমনি এমনি হয়, দুজন মানুষ যখন দুজনকে অনুভব করে, দুজনের মধ্যে যখন মুগ্ধতার রসায়ন কাজ করে  তখন  অনুভুতি আদান প্রদানের মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  কিন্তু একজন যদি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আরেকজনকে প্রেমে পড়ার অভিনয় করে, অন্যজনের থেকে সুবিধা গ্রহণ করে, তখন তাকে আমরা কী বলব?  প্রতারণা নাকি স্মার্টনেস?  আপাতদৃষ্টিতে দেখা একটি প্রেমের সম্পর্কের মাঝে একজন প্রতারক হলে আরেকজনের পক্ষে সেটি বোঝা সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত না  প্রতারণার কৌশলগুলো ধরা পড়ে  আর এই প্রতারণার কৌশল যখনই ধরা পড়বে তখনই সেই প্রলোভনযুক্ত সম্পর্কটি দাঁড়িয়ে আছে অসত্য প্রতিশ্রুতির উপরমানুষের জীবনে প্রলোভন বিভিন্নভাবে আসতে পারে।  জব্বার হোসেন নিজেই প্রশ্ন করেছেন, “...বিয়ে কি কোনো লোভের বস্তু? লোভের কারণে কি বিয়ে হয়? তবে লোভটা কিসের? সম্পর্কের নাকি সম্পদের, ব্যক্তির না অর্থের? সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়, গাছের ফল নয়, লোভের বস্তু নয়।আবার একটু পরেই বললেন, “প্রেমে বিয়ের প্রলোভন বলে কিছু নেই, প্রতিশ্রুতি আছে।  কেউ বিয়ের কথা বললেই কি শুয়ে পড়তে হবে? আর শোবই যদি সেই সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব, দায় নেবার যোগ্যতাও আমার থাকা জরুরিতার এই সাংঘর্ষিক কথায় ও “ শুয়ে পড়ার”  মতো দরিদ্র শব্দ ব্যবহারে আঁতকে না যাওয়া  ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না!  

বিয়ে আসলেই কোনো লোভের বস্তু নয় কিন্তু সে প্রলোভনে শিকার হতে পারে প্রতারণার। প্রতারণা সেটাই যা মানুষকে অসত্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারো অবস্থানের সুবিধা বা অ্যাডভান্টেইজ নেওয়া হয়। তথাকথিত আধুনিক সমাজে হয়তো ভালোবাসা কিংবা প্রেমের সম্পর্ক করতে গেল বিয়ে করার কোনো প্রতিশ্রুতিই দিতে হয় না।  প্রেমটা  হয়ে  যায়।  কিন্তু এটিও সত্য যে  প্রকৃত প্রেমে আজীবন এক সাথে থাকার একটি প্রতিশ্রুতি স্বাভাবিকভাবেই এসে উপস্থিত হয়।  দুজনেই প্রত্যাশা করে, এক সাথে বাকিটা জীবন পার করে নেবে।  আর যখন এ অনুভূতি কাজ করে যে, আমার  জীবনে এই ভালবাসার মানুষটিই সব, তখন বিয়ে বিশ্বাসী মানুষও সহজেই ধর্মীয় বিধি-নিষেধকে উপেক্ষা করতে কুণ্ঠা বোধ করে না।  অবিচ্ছেদ্য মন ও শরীর ভালোবাসার মানুষটির জন্য সাড়া দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে আর এই পুরো ব্যপারটি আরও সহজ হয়ে ওঠে যখন সেখানে বিয়ের মতো আজীবন থাকার একটি  প্রতিশ্রুতি থাকে। কিন্তু যদি সেই প্রতিশ্রুতি হয় সুবিধা হাতিয়ে নেওয়া কিংবা কারো শরীর ভোগ করা, তখন সেই অসত্য প্রতিশ্রুতি প্রলোভনের কারণে হয়ে ওঠে প্রতারণা।    

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতারিত মানুষকে কি আসলেই প্রতারিত হবার দায়িত্ব নিতে হবে? সে যদি দায়িত্ব নিতেই পারে তাহলে সে আর প্রতারিত হবে কী করে।  প্রতারিত হবার জন্য কি মানুষ শুয়ে পড়ে  কিংবা শুয়ে পড়া  ধরণের শব্দ আমাদের জাতীয় জীবনে কতটুকু সভ্যতার পরিচায়ক কিংবা পরিমাপক।  শব্দ ব্যবহারের দৈন্যও কি আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের আরো বেশি অসহায় রূপে প্রকাশ করার প্রচেষ্টা নয়?  তাহলে কি নারীবাদ আমাদের এক খোলস মাত্র? আসলে আমরা পুরুষেরা এমন সব তথাকথিত সামাজিক রীতি তৈরি করেছি যেসব থেকে আমরাই নারীদের বের হতে দেই না। এটি হচ্ছে পুরুষদের দুষ্ট বুদ্ধিমত্তার ফসল এবং নারীদের নিয়তির চুড়ান্ত বিপর্যয়। যেখানে প্রতারণার বিরুদ্ধে একজন নারী তার আত্মসম্মান ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে সেখানে আমরা ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়েও তির্যক মন্তব্য করতে কুণ্ঠিত নই  

একজন নারী একটি সম্পর্কের যেকোনো সময় অনুভব করতে পারেন তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। ইংলিশ ল’ অনুযায়ী, স্বামীও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারেন যদি দেখা যায় তাদের শারীরিক মিলনের সময় স্ত্রী তার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছেন কিন্তু তখনও  স্বামী  শারীরিক মিলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে একজন প্রেমিক কিংবা কথিত প্রেমিক কেনো পারবে না একজন প্রেমিকাকে ধর্ষণ করতে। যদি পুরো সম্পর্কটাই হয় প্রতারণার উপর তখন তো সেখানে প্রথম থেকেই তার অনুমতি ছিলো না। কারণ, সেই প্রেমিকাটি তো অনুমতি দিয়েছিলো তার প্রেমিককে, কোনো প্রতারককে নয়।  বিশ্বের অনেক দেশেই অনেক কেইস লআছে যেখানে প্রতারণা ও এর বিভিন্ন অনুষঙ্গকে বিবেচনা করে শারীরিক মিলনকে ধর্ষণ হিশেবে বিবেচনা করা হয়েছে  

ধর্ষিত হবার কারণে এখনো অনেক নারী আত্মহত্যা করে। অনেক  নারী লোক লজ্জার ভয়ে মামলা করা থেকে বিরত থাকে। প্রতারণায় শিকার হয়ে নারীরাই হয় অপদস্ত, তাদেরকেই শুনতে হয় তিরস্কার, হতে হয় সমালোচনার মুখরোচক উপাদান।  কিন্তু বিপরীতে যে নারীদের সাথে প্রতারণা করে সে অনায়াসে ঘুরে বেড়ায় এই পুরুষশাসিত সমাজে। সেদিক থেকে তো হ্যাপি ধন্যবাদ পাবার অধিকার রাখে।

হ্যাঁ, হ্যাপির কথার মাঝে অনেকটা অসামঞ্জস্যতা দেখা দিচ্ছে। সেটি কিন্তু মৌলিকভাবে রুবেলকে বিয়ে করা না করা নিয়ে। প্রেমিক যদি প্রতারক হয় তবে প্রতারিত একজন মানুষ তার কথিত প্রেমিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাটিই কি স্বাভাবিক নয়? এখানে ভয়াবহতার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।  এমন কি পুরো বিষয়টিতে হ্যাপির  স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্য বোঝার জন্যও সেটি  বিচার্য হতে পারে না। তবে হ্যাপি না রুবেল দোষী সে বিচার আমাদের অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর।

সৈয়দ রুম্মান : কবি এবং ফর্মার গভর্নর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি


সৈয়দ রুম্মান : কবি এবং ফর্মার গভর্নর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি

No comments:

Post a Comment

Comment