সৈয়দ রুম্মান
শেষ বিকেলের রুম্মান চিত্র-সংলাপ—৫
একসময় এই "শেষ বিকেলের পদাবলী" আমাকে করেছিলো অস্থির, অনুপ্রাণিত। মনে আছে, আমি "কবিতার ক্লাস" পড়ার জন্য কতো অস্থির হয়েছিলাম। তারপর একদিন "কবিতার ক্লাস"-কে গিলে খেলাম, আব্দুল কাদিরের ছন্দের বইটিকেও চিবিয়ে খেলাম, আর ভেতরে শুধু জ্বলে উঠতে থাকে আগুন। সেই থেকে শুরু আমার আগুন চিবিয়ে খাওয়ার গল্প! লিটন ভাইয়া, আমার লেখালেখির শুরুর জীবনে যে কয়টি মানুষ আমাকে বারুদের জোগান দিয়েছে তার মাঝে আপনিই সেই প্রথম মানুষ। আপনি আমার "নীলখাম" মনুবার্তায় প্রকাশ করে দেখিয়েছিলেন কীভাবে বারুদ আগুন হতে পারে। আর সেই আগুন আর বারুদের খেলায় ঘৃত ঢালেন আমার কাব্যগুরু সৌমিত্র দেব।
আর আমি কবিতায় স্বপ্ন বোনার রঙ পেয়েছিলাম কবি স্বপ্ন কুমারের থেকে। তিনি যখন পরবাসী হলেন, কবি আমজাদ হোসেন হলেন আমার পাগলামির সারথি। এবং আমার কবি সুনীল শৈশব, যাঁর থেকে শিখেছি কবিতায় একটি মানুষ কতোটুকু বাতুল হতে পারে, কতোটুকু আপাদমস্তক কবি হওয়া যায়।
একদিন যখন বিজন সৌরভের সম্পাদিত ছোটকাগজ "জলপাই"-এর রিভিউ করতে গেলাম তখন কবি সুমন সুপান্থের কবিতায় আবিষ্কার করলাম কীভাবে "তেইশ বছরের জীবন কাঁপে বৃষ্টির সন্ত্রাসে"। সেই থেকে কবি সুপান্থ আমার প্রকৃত পান্থসখা।
আর সেই "জলদাসের মৎস ঘ্রাণ" অনেকবার নিতে গিয়েও গল্পলেখক আকমল হোসেন নিপুকে কখনো পুরোটা আঁকতে পারিনি। তবে তাঁর সংস্পর্শ আমার কাছে শ্রদ্ধা আর বিনয়ে আমার আমিকে করেছে অনুপ্রাণিত।
আপনারা আমার কাছে সেই উঁচু উঁচু কারুকাজ খচিত মিনার যাদের দূর থেকে দেখে কাছে যেতে ইচ্ছে করে, যাদের দেখে নিজের মাঝেও ঝলকানি লাগে, কিন্তু সেই মিনারগুলো চিরকালই মিনার হয়েই থেকে যায়। আমার সমগ্রতায় আপনারা আছেন। মাঝে মাঝে ভাবি, কবিতায় ভর না করলে আমার জীবনটা কাটতো অন্ধকার ঝিনুকের খোলায়, আর এখন কাটে কবিতার মুহুর্মুহু আলোর বন্যায়!
এই "শেষ বিকেলের পদাবলী" শুধু একটি প্রকাশনা নয়, সে আমার কাছে বেড়ে ওঠার এক গল্প, নিজ্কে চীরে চীরে আয়নার মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটি গল্প, আর একে ঘিরেই বোধহয় একসময় রচিত হতে থাকে "শেষ বিকেলের রুম্মান চিত্র-সংলাপ"—সে হয়তো সময়ের কাছে একদিন রুপান্তরিত হবে কথকতায়!