Welcome you to my blog. Please feel free to leave your comment. Thank you for visiting.

Thursday, 16 October 2014

সময়কেই শুধু চেনা হলো না

সৈয়দ রুম্মান


সময়কেই শুধু চেনা হলো নাসৈয়দ রুম্মান


তোমাদের পাড়ায় অতিথি হতে বললে, হলাম।
চারদিক থেকে এলো ধুন্ধুমার ফানুস।
নিজের শরীরের উপর নিজেই চেতনার হুল ফোটাই — নাহ, আমিই তো!

কেউ কেউ বলল, এভাবেই ঘুরাতে হয় সমাজের চাকা; মাইরি আপনি না হলে...মুখের স্বাদ এখন টের পাই...আহা কী ঘুম...!তোমাদের পাড়ার প্রতিটি কার্নিশে দেখি উচ্ছ্বসিত জীবন।
তোমাদের পাড়ায় হয়ে উঠলাম অবিসংবাদিত কন্ঠ, বলতে পারি — ফাইয়াকুন।

বিনয় সেই দিনটিকে করেছিল মহামানবিক। মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া লালা ছিলো কারো কারো কাছে আবে যমযম।
প্রাপ্তি এসে সমবেত হয়েছিলো তোমাদের চোখে।

করমর্দন, স্কন্ধ-মিলন ও সুবাসিত শব্দকে পেরিয়ে বিদায়টি ছিলো অভেদ্য।

শুনেছি তোমাদের আর ফিরে তাকাতে হয়নি। শিশুগুলো আজ বৈদেশী ইশকুলেও পড়ায় ।
তোমাদের বেড়ে ওঠা চলতেই থাকে।

আমার ঘরের পলেস্তরা খুলে পড়ল গতকাল, হঠাৎ করেই।
তোমাদের পাড়ায় আসতেই শুরু হলো কী যে হুলুস্থুল;
উৎসুক মুখগুলো প্রতীক্ষায় উঠে এলো সহবাস ছেড়ে,
—নেতা, খালি হুকুম করেন...
—নেতা, কী হইছে কন...
—নেতা, আপনার লাগি জীবনও দিতাম পারি...

ভালোবাসার আতিশয্যে নিজেকে এবার একত্রিত করি,
এই, তোমরা এতো ব্যস্ত হয়ো না, আমার ঘরের সামান্য পলেস্তরা খসেছে মাত্র...

অসমাপ্ত কথায় তোমরা এসে জড়ো করো,
—নেতা, কী বলেন!
—নেতা, আপনি আমাদের বাবার মতো...
—নেতা, মুই আছি, খালি কইয়া দেহেন...

আকাশের দিকে তাকাই সমর্পিত বিস্ময়ে,
আপন জেনেই তো নিজেই এলাম আজ তোমাদের কাছে, যদি কেউ পলেস্তরাকে প্রতিস্থাপন করে দাও...!

হঠাৎ বিস্ময় হয়ে ওঠে নির্বাক। এক মুহূর্ত আগে যেখানে ছিলো প্রত্যাশার প্রতীক সেখানে বিমুখ লোকালয়;
কথার অরণ্যে বাজে মেঘের গর্জন,
—মানে, আমার বউটা পোয়াতি...
—মানে, কাইল আমার ছাওয়াল চলি যাবে...
—মানে, ইস্, যদি একদিন আগে জানতাম!

এবার ঘুরে দাঁড়াই। অপ্রতিরোধ্য বিদায়ের পথে পড়ে থাকে বুভুক্ষু মঞ্চ। রুপায়িত দৃশ্যে ফিরে যায় অগ্নিনির্বাপণ।
চিত্রের গভীর ভেদ করে হেসে ওঠে বল্গাহারা ঠোঁট,

সময়কেই শুধু চেনা হলো না!

#SyedRumman
রাত ২.১৫ মি.
১৬ অক্টোবর ২০১৪
ক্যাম্ব্রিজহিথ রোড, লন্ডন

Wednesday, 8 October 2014

কবিতা ও আবৃত্তির আত্মীয়তা


সৈ য় দ  রু ম্মা ন


বর্ণমালার অসম্ভব সুন্দর বিন্যাসই কবিতা। তাকে পড়ি চোখ দিয়ে। একটু এগুলেই মনে হয় আরেকটু পথ যেতে হবে।  ছন্দের বৃত্ত থাকা আর না থাকার  মাঝে কান হয়ে উঠতে থাকে সচল।  শব্দের নিপুণ গাঁথুনি, ছন্দ, রস, উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও দৃশ্যকল্পে জেগে ওঠে মন।  সে অনুভব করে ছুটে যাওয়ার এক তাড়না। চোখ, কান, ও মনের মাঝে এক বহুমুখী সেতু তৈরি হয়।  সে সেতুতে তখন  সহযাত্রী হয়ে ওঠে হয় চেতনা । আর তখন তারা আহ্বান করে ঠোঁটকে। ঠোঁটের সাথে কন্ঠ ও আবেগ। তখন সমস্ত সত্তা জুড়ে এক তোলপাড় শুরু হয়। সে ক্রমাগত গাঢ় হয়ে  ছড়িয়ে যেতে থাকে। সৃষ্টি করে আরেক দৃশ্যকল্প। সেখানে কণ্ঠস্বরের যথাযথ প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতি বদলাতে থাকে। প্রমিত উচ্চারণে গতি, বিরাম ও ছন্দের সমন্বিত ব্যঞ্জনায় তারা কবিতাকে দেয় নতুন প্রাণ।  আর এই  শৈল্পিক প্রক্রিয়াকেই  নাম দেই আবৃত্তি ।


কবিতা ও আবৃত্তির আত্মীয়তা: সৈয়দ রুম্মান 


কবিতা ও আবৃত্তির প্রকরণগত সম্পর্ম্ক অবিচ্ছেদ্য। যে প্রকরণের মাধ্যমে শব্দ ও বর্ণের বিন্ন্যাসে কবিতা হয়ে ওঠে আবৃত্তির মূলেও তাকে দেখা যায় । কবি তার কবিতায় যে  নির্বাক চিত্রকে ধারণ করেন একজন আবৃত্তি শিল্পী তার কন্ঠের নৈপুণ্য  দিয়ে তাকে দেন নতুন এক প্রাণ, করে তোলেন জীবন্ত। উপস্থিত শ্রোতার চোখে ও মনে তখন ভেসে ওঠে কবিতার রূপায়িত দৃশ্য। আবৃত্তির মৌলিক উপাদানগুলোকে ধারণ করে কন্ঠের জাদুতে আবৃত্তিশিল্পী তখন নিজেই হয়ে ওঠেন আরেক স্বতন্ত্র শিল্পের স্রষ্টা। অনুভূতি ও দৃশ্য  তৈরিতে অভিনয় যেখানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহারের উপর অনেকটাই নির্ভর করে সেখানে আবৃত্তি পুরোটাই বাচনিক। তাইতো পুরনো মিথ ও পথকে পরিক্রম করে আবৃত্তি এখন একটি স্বতন্ত্র বাচনিক শিল্প। তার আছে নিজস্ব ব্যাকরণ ও পাঠপ্রক্রিয়া।  ভাষার প্রমিত উচ্চারণের চর্চায় স্বতন্ত্র শিল্প হিশেবে আবৃত্তি এখন লাভ করেছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে আবৃত্তি এখন শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে  পড়েছে  গল্প, গল্পাংশ, সাহিত্য মান সমৃদ্ধ চিঠি, প্রবন্ধ ও নাট্যাংশেও।

তবে কবিতা আবৃত্তিকালে, আবৃত্তির বিশেষ কিছু উপাদানের উপর একজন আবৃত্তিকারের দক্ষতাই আবৃত্তিকে করে তোলে শৈল্পিক। আবৃত্তির রীতি-নীতি রক্ষা করে একটি নান্দনিক কবিতা পাঠও হয়ে উঠতে পারে আবৃত্তি। আবৃত্তিতে প্রমিত উচ্চারণ, ছন্দ, পাঠের গতি, স্বচ্ছতা, স্বর প্রক্ষেপণ, গড় গতি, বিরতি/ যতি , ভাব, অনুভূতি, আবেগ, অনুরণন, স্বর বৈচিত্র্য ও স্বর বর্ণভেদের সমন্বয়ই সৃষ্টি করে কবিতার সাথে আবৃত্তির এক অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়তা। আর এই  কবিতা ও  আবৃত্তির আত্মীয়তায় কোনো কোনো কবিতা বেজে ওঠে মুখে মুখে, হয়ে ওঠে কালজয়ী।


সৈয়দ রুম্মানঃ কবি, আবৃত্তিশিল্পী ও টিভি উপস্থাপক। 

Tuesday, 7 October 2014

কবিতা ও সংগীতে ফিরোজা বেগম

শেষ বিকেলের রুম্মান চিত্র-সংলাপ—৪


সৈ য় দ  রু ম্মা ন


কবিতার সঙ্গে সংগীতের একটা মিল আছে। রবীন্দ্রনাথ এ মিলের মূলে দেখিয়েছেন ভাব যা কবিতায় প্রকাশ হয় কথায় আর সঙ্গীতে হয় সুরে। তবে কি এই কবিতা ও সংগীতের ভাবের উপর ভর করেই সুরের সঙ্গে কবিতার এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ? উত্তরের উপসংহার সহজে না টানলেও অনুভব করি—শব্দ, ছন্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও দৃশ্যকল্পের সাথেও কবিতায় এক গোপন সুরের উপস্থিতি। এই সুরের টানে কবিতার প্রতিটি প্রকরণের সাথে হয় সম্পর্ক। এই সুর মনের চোরা কুঠরিতে তৈরি করে ঢেউ; তারা জেগে থাকে জোয়ার-ভাটায়। সংগীতের সুর বাজে কান থেকে প্রাণে, আর কবিতার সুর খেলা করে সমস্ত সত্বায় । কবিতা ও সংগীতে এই সুর গুনতে গিয়ে কবিতা প্রসবকালে কান দুটো প্রার্থনা করে সংগীত; তার নিগূঢ় মূর্চ্ছনায় লেখা হয়ে ওঠে কবিতা। সংগীত সময়টাকে বন্দি করে রাখে কবিতার অন্দরে; পলায়নপর সময় চেতনার শেকল পরে হয়ে উঠতে চায় কবিতা। সে কারণেই আমার সময়গুলো কবিতার কিমিয়ায় ঘুরপাক খাওয়ার পেছনে আছে অনেক গাল-গল্প, আছে নিযুত বন্ধুর পথের উপাখ্যান, আছে কিছু কিছু সুর আর সংগীতের মূর্চ্ছনা, তারা আমাকে লাগামছুট অস্থিরতায় টেনে নেয় কল্পনার গহীন গহ্বরে।


কবিতা ও সংগীতে ফিরোজা বেগম: সৈয়দ রুম্মান



সংগীতের মূর্চ্ছনায় তেমনি এক সময় ছিল যখন আমি লিখছি। কবি হয়ে ওঠার প্রচন্ড এক তাড়া কাজ করে নিজের ভেতরে। খরস্রোতা মনুর পাড় ঘেঁষে দেখি স্বপ্নের খেয়াঘাঁট, দেখি জলের সাথে পূর্নিমার মিতালি। বাকাট্টা রঙিন ঘুড়িগুলো উঁকি দেয় ইউকেলিপ্টাসের ডগায়। ধীর পদব্রজে মফস্বলের গলি-ঘুপচিগুলো পেরিয়ে শুনি হৃদয়ের ভেতরে হৃদয়ের ওঙ্কার। আমি পড়তে শুরু করি গাছ, ফুল, পাখি, মেঘ, বৃষ্টি ও রোদের ভাষা। সে ভাষা আমাকে টেনে নেয় সময়ের কাছাকাছি। আর সময় এসে ঠাঁই নেয় প্রতিটা পথের শেষে। সময়ের থেমে থাকায় আমি হই অসীম। ছুটতে থাকি ক্রমাগত। এ এক অবাধ্য ছোটা।

ছুটতে ছুটতে একদিন চলে আসা মনুকে পেছনে ফেলে। মফস্বলের সূর্য-সময় পেরিয়ে নাগরিক পথগুলো হয়ে উঠতে থাকে মোস্তফাপুর গ্রামের হেমন্তের আইল। ধানমন্ডি লেইককে মনে করতে থাকি মনু ব্যারেজ। ধানমন্ডির অপ্রশস্ত পথগুলোকে মনে করতে থাকি রঘুনন্দন্পুরের টিলা। কোথাও উঁচুনিচু দেখলেই মনে হয় এই বুঝি কালেনগার পাহাড় সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে । বেড়িবাঁধ হয়ে উঠতে থাকে হাকালুকি হাওড় অথবা কাওয়াদিঘি। আমি লিখতে থাকি একটা কাক-শাবকের মৃত্যুর কাহিনী, লিখতে থাকি টি এস সি চত্ত্বরে বসা তরুণীর খোলা পিঠে হেসে ওঠা বেলিফুল। আমার যাবার পথে দেখি ময়নামতি, দেখি চাঁদপুরের মোহনায় জীবনের বিমুগ্ধ বৈচিত্র। প্রতিটি দিনের শেষে ডাকতে থাকি রাত, আর রাত নেমে এলেই আমি আবারও লুটিয়ে পড়ি আমার ভেতরে— সুর, ছন্দ আর কবিতায়।

এই আমার আমিকে সাথী করে একদিন চলতে চলতে চলে আসা এই দূরের দূরত্বে। টেমসের খানাখন্দে বসে দেখি বেরিবাঁধ, ক্যানারি ওয়ার্ফে বসে দেখি ধানমন্ডি লেইক। ঝিগাতলার গলিগুলো উঠে আসে ব্রিকলেইনে। আমি অনেক কিছুই খুঁজে পাই এই বিলেতে আবার কিছু কিছু পাইনা। আমার আবহানি মাঠ কিংবা টং দোকানগুলো ফিরে আসেনা, ফিরে আসেনা রিক্সার খোলাহুডে বৃষ্টি-বিকেল। আমি আবার যাই অস্থির পথ ধরে। আমি পাতাল-পথের শেষে জেগে উঠি, একত্রিত করি ছন্দ আর শব্দের বিচিত্র চিত্রকে। না পাওয়ায় যান্ত্রিক রাতগুলোর কাছে সমর্পিত হবার চেষ্টায় থাকি উন্মুখ। একটু ফুরসতে সুর ও ছন্দে হয়ে উঠি সেই পুরাতন পিরানের প্রবহমান আমি। এ আমার যত বেড়ে ওঠা, এ আমার যত আঁকিবুকি তার শিথানে অনাদির থেকে জেগে থাকে সুর ও সংগীত। তারা আমাকে এগিয়ে নেয়। তারা হয়ে ওঠে আমার স্মৃতি জাগানিয়া, হয়ে ওঠে চিন্হায়ক।

স্মৃতি ও বিস্মৃতিতে এগুনো আমি, কবিতায় বেড়ে ওঠা দৈনন্দিন যাত্রাপথে এই সংগীত-ই আমার স্ক্র্যাচ, টেনে নিয়ে যায় স্মৃতির অস্থির চিত্রে। তারা প্রতি নিয়তই বাজতে থাকে কানে, কান থেকে প্রাণে। সে বেজে ওঠায় কোনো কোনো কন্ঠ ও সুর যেন হয়ে ওঠে দর্পণ। দেখি ভেসে যাওয়া সমকাল, দেখি সময়, দেখি প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিতে যাওয়া সন্ধ্যা ও সকাল। আর এই সুর ও কন্ঠের অনেকই হয়ে ওঠেন চলতি পথের আত্মীয়। তাঁরা আমার হয়ে থাকেন অহর্নিশ। ভালোবাসা, প্রেরণা ও শক্তি সঞ্চয়ে সবময়ই হই তাঁদের অভিমুখী। যে কবিতার পৃথিবী সৃষ্টিতে তাঁদের কন্ঠের ধ্বনি মিশ্রিত, সে পৃথিবী থেকে তাঁদের এতটুকু জো নেই বিচ্যুত হবার, বিস্মৃত হবার। তাঁদেরকে কখনো না-হয় না-ই বললাম ভালোবাসি, তবুও তো তাঁরা রয়ে যাবেন গোপন গ্রন্থিতে। তাঁদের যাওয়া মানে আমার কাছে ফিরে আসা, আমার কবিতায় ভর করে ভরে তোলা পেপিরাসের পৃষ্ঠাগুলো। তাঁদের দূরে যাওয়া মানে আমার দৃষ্টি পেরিয়ে স্বপ্ন ও বাস্তবতায় চড়ে বেড়ানো। যেখানে তাঁদের উপস্থিতি মানে আরেকটা শেষ বিকেলের গল্প, আরেকটা চিত্র-সংলাপ।

আর এই শেষ বিকলের চিত্র-সংলাপে এসে দেখি সেই তাঁদেরই একজন ফিরোজা বেগম চলে গেলেন সময়ের পৃথিবী ছেড়ে অন্য এক সময়ে। বেদনায় ন্যুব্জ হয়ে ভাবি, তাঁর যাত্রাপথে কতটুকু কষ্টের কাঠখড় তাঁকে পেরোতে হয়েছিলো; তাঁর যে কন্ঠ আমাকে দিয়েছিলো হাসি-রোদ মাখা শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে এই বিভুঁইয়ের যৌবনেও যে দিয়েছিলো কবিতায় সিক্ত অনেক কোজাগরী রাত, সেই কন্ঠকে কি কস্মিনকালেও পেতে হয়েছিলো কাশফুলসমও কোনো বেদনা। বাস্তবতায় সে আজ আমার জানার পরিধিতে নেই, কখনোই আর থাকবে না । তবে তাঁর এই চলে যাওয়া থেকে যাবে বেদনার এক আখ্যান হয়ে। সে বেদনার গভীরতা আরো বেড়ে যাবে যখন থেকে থেকে মনে হবে, আমার সব অদৃশ্য প্রেরণার কথা তাঁকে বলা হলো না, আর কখনই হবে না। বললে তাঁর কেমন অনুভূতি হতো! আর জানা হবে না তাঁর অনুভুতি। বিপরীতে আরেকবার মেনে নিতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে নজরুল সংগীতের এই সম্রাজ্ঞীর চলে যাওয়া। নজরুলকে আমি যতটুকু চিনেছি সংগীতে তার উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিলো তাঁর উপস্থিতি। সেই নজরুলের “আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো” গাইতে গাইতে তিনিও চলে গেলেন চিরতরে। তিনি কি ভেবেছিলেন, তাঁরও একদিন চিরদিনের জন্য চলে যেতে হবে অথবা তাঁর কন্ঠের অনুরাগে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল থেকে অনেক দূরে বসে কেউ একজন লিখবে তাঁর চলে যাওয়ার দুঃখগাঁথা। এই দুঃখগাঁথা আজ স্বগোতক্তি হয়েই জড়ো হয় আমার হৃদয়ের গহীনে। একটা থির ধরে থাকা বাতাস এসে লাগে গায়ে। ভেতরটাও কেমন যেন কেঁপে কেঁপে ওঠে। সে মনে করিয়ে দেয়, “ তবু আমারে দেব না ভুলিতে”। আমিও ভাবতে থাকি, কত দূর গেলে তারে চলে যাওয়া বলে। কতটা দূর তবে চলে যাওয়া যায়। চলে গেলেই কি নিয়ে যায় সবই, নাকি আসলেই সে হৃদয়ের চড়া দামে হৃদয়ের নিয়ে গেছে সবই!

না, আমি কিছুই জানতে পারিনা। আজ কল্পনা ও জানার মধ্যে বিস্তর ব্যবধানে আমার আহত হৃদয়ে বাজে এক করুণ বিউগল। অদেখা প্রিয় মুখকে ভেবে মুছি স্যাঁতস্যাঁতে চোখ। অবাধ্য আঙুলগুলোকে দেখি সময়কে ক্রমাগত বন্দি করতে থাকে বিন্যস্ত বর্ণমালায়। আর এভাবেই বদলাতে থাকে আমার দিনপঞ্জিকা। শেষ বিকেলের রুম্মান চিত্র-সংলাপে কবিতা ও সংগীতের মিথস্ক্রিয়ায় সেখানে জেগে থাকে স্মৃতি জাগানিয়া একটি নাম— ফিরোজা বেগম।



সৈয়দ রুম্মানঃ  কবিআবৃত্তিশিল্পী  টিভি উপস্থাপক। সাবেক ভিপি  গভর্নরলন্ডন মেট্রপোলিটান ইউনিভার্সিটি।


তৃপ্তির হাসিতে লাবণী বড়ুয়া

সৈ য় দ  রু ম্মা ন


তৃপ্তির হাসিতে লাবণী বড়ুয়া: সৈয়দ রুম্মান

ভার্সেটাইল সিঙ্গার এই কথাটার মানে নিয়ে হয়তো অনেক মত থাকতে পারে তবে আমার দেখা হয়েছিলো ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে এক ভার্সেটাইল সিঙ্গারের সাথে। সিডির মোড়ক উন্মোচন পর্বের শেষেই উপস্থাপিকা ফারজানা আহমেদ ঘোষণা দিলেন, এবার প্রোজেক্টরে ভেসে উঠবে শিল্পীর গাওয়া গান ও তার দৃশ্যায়ন। সুরের ঝঙ্কারে আমার বুঝতে দেরি হচ্ছিলো না যে, গানে আর যাই হোক প্রাণের অপ্রতুলতা নেই। সুমিষ্ট কণ্ঠ আর সুরে যেন ক্রমশই বুঁদ হয়ে যাচ্ছিলাম। পাশে বসা রাজু আলীকে সাথে সাথে ধন্যবাদ দিতে ভুল করলাম না– আমাকে আর আদনান পাভেল কে ধরে নিয়ে আসার জন্য। বারবারই ভাবছিলাম কি আছে তারপর, শেষ পর্যন্ত কি ভার্সেটাইল সিঙ্গার এই কথাটার যথার্থতাটা থাকবে। ভাবনার মাঝপথেই উপস্থাপিকা এসে আবারও ঘোষণা দিলেন, এবারে মঞ্চে আসছেন ভার্সেটাইল সিঙ্গার লাবণী বড়ুয়া। ঝলমলে দৃষ্টিনন্দন শাড়িতে যখন ধরলেন "শখি ভাবনা কাহারে কয়" তখন আমিও ভাবতে শুরু করি -সুরের আকাশে তুমি যেগো শুকতারা/ আমায় করেছো একি চঞ্চল বিহ্বল দিশাহারা...বুঁদ হতে হতেই নিজেকে এবার প্রশ্ন করি- একেই কি তবে বলে ভার্সেটাইল! আমাকে বিস্মিত করে আবারও লাবণী তাঁর কারুকাজখচিত ঢেউ দোলানো কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন দেশের গান "আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা"। আমি তাঁর গানের সাঁকো বেয়ে বারবার চলে যাচ্ছিলাম স্কুল পেরোনো সেই জাফরান রোদমাখা দিনে। সেখান  থেকে এবার নিয়ে এলেন তাঁর মোড়কবন্দি মৌলিক গান "কী গভীরে" আর তখনই আমার ভেতরে হয়ে উঠলেন ভার্সেটাইল সিঙ্গারের এক আশ্চর্য প্রতীক হিশেবে।  বিলেতের মাটিতে আমার অনেক সৌভাগ্য হয়েছিলো বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে যাওয়ার কিন্তু এবারই প্রথম গানের সিডি'র মোড়ক উন্মোচনে এসে নিজের সময় এবং উপস্থিতিকে মনে হল সার্থক। সুরের মূর্ছনায় সন্ধ্যার রঙ যতই পরিবর্তিত হচ্ছিলো ততই যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম সুরের অতলে। নিজের মোড়কবন্দী গানের পর আবারও দেখালেন তাঁর বহুমাত্রিক কণ্ঠের যাদু; গেয়ে উঠলেন "ও মোর ময়নাগো", "এ কি সোনার আলায় জীবন ভরিয়ে দিলে", "জল পড়ে পাতা নড়ে", "ধিন ধিন তা না না"... আর এর মাঝেই নিজেকে এক সময় হারিয়ে ফেলি এক যাদু-বাস্তবতায়। হাড় কাঁপানো শীতে সে যেন ছড়িয়ে দিল এক গাল তৃপ্তির হাসি যে হাসির ইঙ্গিতে বুঝতে অসুবিধা হলো না, ভার্সেটাইল সিঙ্গারের আরেক নাম লাবণী বড়ুয়া!     


(প্রথম প্রকাশ মার্চ ২০১৪, উইকলি দেশ, লন্ডন )


সৈয়দ রুম্মানঃ কবি, আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক এবং প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ।  

Monday, 6 October 2014

বিলেতের বৈশাখী মেলা মালটিকালচারালিজমের লজ্জা

সৈ য় দ  রু ম্মা ন



বাঙলা বর্ষপঞ্জির বা বাঙলা নববর্ষের উৎপত্তি নিয়ে যতই বিরোধ থাক না কেনো কিংবা এর প্রবর্তন সম্রাট আকবর অথবা নবাব মুরশিদ কুলি খানের হাত ধরেই হোক, আমরা একটা জায়গায় এসে এক হতে পারি আর সেটি হলো এই নববর্ষের উৎসব “পহেলা বৈশাখ” বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য চিন্হায়ক, ঐতিহ্যভিত্তিক বাঙালির এক জাতীয় দিবস: বাঙালির বাঙলা নববর্ষ। যদিও সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত বাঙলা বর্ষের পহেলা বৈশাখ ছিলো গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে  ১০ বা ১১ই এপ্রিল। আর এখন পহেলা বৈশাখ পালিত হয় বাংলাদেশে ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ ইতোমধ্যে বাঙলা পঞ্জিকার প্রথম দিনের তারিখটি ৪ বা ৫ দিন পিছিয়ে গেছে। ৪০০ বছরে বাঙলা পঞ্জিকার এ ব্যবধানের ছোঁয়া লেগেছে এ বিলেতেও, যার আরেক নাম বলা হয় “তৃতীয় বাঙলা”। এই তৃতীয় বাঙলায় পহেলা বৈশাখের বিশাল আয়োজন হয় ইস্ট লন্ডনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মে অথবা জুন মাসের কোনো এক রবিবারে। বাঙলা ভাষা আর সংস্কৃতির টানে ব্রিটেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙলা ভাষাভাষীরাই প্রধানত পাড়ি জমান আলতাব আলীর শহর ইস্ট লন্ডনে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাঙলা ভাষাভাষীদের কাছে ইস্ট লন্ডনের এই বোশেখের উৎসব ‘বৈশাখী মেলা’ নামে  হয়ে উঠতে চায় তাঁদের মিলনমেলা।  

বিলেতের বৈশাখী মেলা মালটিকালচারালিজমের লজ্জা: সৈয়দ রুম্মান


গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার আয়োজনটা প্রতিবারের মতোই ছিলো জাঁকজমক পূর্ণ। ইস্ট লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে ঢোকার আগেই বুঝতে অসুবিধা হয় নি যে আজ বাঙালিদের মাঝে কিছু একটা হতে চলেছে। মাইল-এন্ড আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ভিক্টোরিয়া পার্কে প্রবেশের আগ পর্যন্ত রঙবেরঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে দল বেঁধে বাঙালিরা ছুটছিলেন মেলায়। শিশুদের চোখেও খেলা করছিলো অনিন্দ্য আনন্দ! মেলার ভিড়টা মূলত বাড়তে থাকে বেলা বাড়ার সাথে সাথেই। অনেক দর্শকরাই এসেছিলেন তাঁদের প্রিয় তৃতীয় বাঙলার কণ্ঠশিল্পী কায়া, রওশন আরা মনি, সাজেদা কামাল শেফালি, রুবাইয়াৎ জাহান, লাবণি বড়ুয়া, হাসি রানী, হিমাংশু, মাহবুবুর রহমান শিবলু, নাজমুন খান তন্নি, মাহবুবুর রহমান সবুজ, সাইদা তানি, দেলোয়ার হোসেনের গান শুনতে আবার অনেকেই শেষাবধি অপেক্ষা করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী কুমার শানু ও বাংলাদেশের বর্তমানের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল “শূন্যের” জন্য।  তানজিনা, আমিন রাজা আর খানিকটা কৃত্রিমতায় দুষ্ট হলেও উপস্থাপিকা নাদিয়া আলীর প্রাণোচ্ছল উপস্থাপনায় সবকিছুর ঊর্ধে এ যেনো  ছিলো ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সম্প্রীতি ও ঐক্যচেতনার প্রতীক হিশেবে তৃতীয় বাঙলার বাঙালি জাতির এক সর্বজননীন মহোৎসব।   


তবে সাত সমুদ্র পেরিয়ে আসা বাঙালির ঐতিহ্যভিত্তিক এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিক মিলনমেলা প্রবাসী বাঙালিদের হৃদয়ে সম্প্রতি জাগিয়ে তোলেছে এক গভীর বেদনা। মাল্টিকালচারালিজমের নামে এই তথাকথিত বৈশাখী মেলায় প্রায়শই দেখা যায় বাঙলা সংস্কৃতির বলাৎকার যার ব্যতিক্রম এবারও হয় নি। মেলায় আসা সিংহভাগ দর্শকদের এবারও হতাশা ও লজ্জা নিয়ে ফিরে আসতে হলো। যেখানে পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করার কথা সেখানে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী একটি বিশেষ ভাষার সংস্কৃতি নিয়ে চলে উদ্দাম নৃত্য। এবারের মেলার আয়োজনটাও সব শেষে কতোটুকু বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছে সে প্রশ্ন বেদনা হয়ে থেকে গেছে মেলায় আগত সিংহভাগ দর্শকদের কাছে। ঐতিহ্যগতভাবে সমৃদ্ধ বাঙলা সংস্কৃতিকে কেউ যেন সুকৌশলে হত্যা করতে চেয়েছে। ফ্যাশন শো’র নামে হিন্দি গান দিয়ে বাঙলা সংস্কৃতি পিপাসু দর্শকদের সাথে করা হয় প্রতারণা ও উপহাস। যেখানে এই তৃতীয় বাঙলা তাঁর নিজস্ব বাঙালি কণ্ঠশিল্পীতে স্বয়ং সম্পূর্ণ সেখানে ঐতিহ্যবাহী বাঙলা ভাষার গানকে উপেক্ষা করে উপস্থাপন করা হয় হিন্দি গান। অন্তত এই একটি দিন বাঙালি সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করা যেতো এই মাল্টিকালচারাল ব্রিটেনে। আর ব্রিটেন একটি দেশ হিশেবে গৌরবের সাথে ধারণ, লালন এবং অনুপ্রাণিত করে বহু-সংস্কৃতির চর্চাকে কিন্তু বাঙলা ভাষার সংস্কৃতির  পাশাপাশি কেবল বিশেষ একটি ভাষার সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করা আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা ও লজ্জা বৈ আর কিছু হতে পারে না। এ নির্ঘাত মাল্টিকালচারাল ব্রিটিশ সোসাইটির প্রতি একটি চপেটাঘাত। তবে মেলার সবচেয়ে বড় চমক ছিলো ইংলিশ গায়িকা অ্যালি ফসেটের কণ্ঠে শাহ আব্দুল করিমের গান। তখন পুরো মেলা জুড়ে দর্শকদের চোখে খেলে যায় আনন্দ ও বিস্ময়। কিন্তু পুরো মেলার অনুষ্ঠান জুড়ে চোখে পরে বাঙলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গানের উপস্থিতি যেখানে সামঞ্জস্যহীনভাবে ইংলিশ গান ছিলো মাত্র একটি। এমনকি ভারত থেকে আগত শিল্পী কুমার শানু তাঁর ৪টা গানের মধ্যে ১টা গান বাংলায় গেয়েছেন যেখানে তাঁর প্রায় প্রতিটি গানেরই বাঙলা ভার্সন ছিলো। তিনি মঞ্চে এসে যখন প্রথমেই হিন্দি গান দিয়ে শুরু করেন তখন উপস্থিত দর্শকদের বিশাল এক অংশ চিৎকার করতে থাকেন – দাদা, বাঙলা গান হোক, বাঙলা গান হোক! তাঁর দ্বিতীয় গানটা বাঙলায় শুরু করা মাত্রই দর্শকদের মাঝে যে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে তা নিমিষেই হারিয়ে যায় তাঁর পরবর্তী হিন্দি গানের তাণ্ডবে। লজ্জা আর অভিমানে অনেক দর্শকই তখন মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন।


বিলেতের এই বৈশাখী মেলা হতে পারে প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটি এবং বহু জাতি ও  সংস্কৃতির মৈত্রীর এক মেলবন্ধন। অথচ এর আয়োজকদের সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার অভাব ও সাংগঠনিক দুর্বলতা বিলেতের এই বৈশাখী মেলাকে করে তোলেছে মালটিকালচারালিজমের লজ্জার এক প্রতীক হিশেবে।


সৈয়দ রুম্মানঃ কবি, আবৃত্তিশিল্পী ও টিভি উপস্থাপক সাবেক ভিপি ও গভর্নর, লন্ডন মেট্রপোলিটান ইউনিভার্সিটি।   

Thursday, 2 October 2014

Red Button



Syed Rumman



Red Button: Syed Rumman


When I woke up,  I noticed the red button was missing from my shirt;
I asked my neighbour, reported to the police,
All the TV channels were broadcasting the news,
Yet they ain't got any clue!
Now I am packing my stuff to go to Egypt, climbing the Pyramid
I will look for it, or to the Mars.
Can't help but mumbling where is my red button!!

My friend says, the missing red button is in Dubai
But one sheikh sold it to an Iranian girl who went missing last night;

(After we met)
The Iranian girl replied to my email again
And she asked me " Would you wait for me till I return?"
Closing my eyes, I see how the red button was falling apart from my shirt;
That resembles the magical moment,
The electric red lips possess the whole horse-power of the eternity,
How they made me loss against the shameless night;
While a baby boy is being born in your next door then
An angelic fairy is wiping out my those sob-stories, and
Adorning me with the invincible magnetism.

All I can see 
The boundless desires are being drawn in her magical eyes.


A dream is a dream until it turns into reality; the moment it becomes true it cracks up. Let the dream to be dreamt otherwise it will be brought to an abrupt end; dream is so tender, and conversely facts are arduous and distance maker. It is neither easy to welcome the end of story of a dream nor to accept it to be broken. Without a dream it is not possible to live like a human being. 

Comment